স্ত্রীর পরকীয়ার প্রতিবাদ করায় কুমিল্লায় মমিনুল ইসলাম (৩৫) নামে এক ব্যবসায়ীকে কৌশলে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন নিহতের মা রাবেয়া বেগম।
শনিবার সন্ধ্যায় ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের সদস্যরা গ্রামবাসীর সহায়তায় নিহতের বসতভিটায় তার দাফন সম্পন্ন করেছে।
আদর্শ সদর উপজেলার দুর্গাপুর উত্তর ইউনিয়নের ময়নামতি সেনানিবাসসংলগ্ন নিশ্চিন্তপুর এলাকায়।
এর আগে ৩০ জুলাই কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার দুর্গাপুর উত্তর ইউনিয়নের ময়নামতি সেনানিবাসসংলগ্ন নিশ্চিন্তপুর এলাকায় ভাড়া বাসায় খুন হন মমিনুল ইসলাম।
নিহত মমিনুল ইসলাম বুড়িচং উপজেলা সদরের ফকিরবাড়ির মৃত জাফর আলী শাহের ছেলে।
নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, মমিনুল ইসলাম সৌদিতে প্রায় ১৩ বছর প্রবাস জীবন শেষে চলতি বছরের মার্চ মাসে দেশে ফেরেন। পরে তিনি নিজ বাড়িতে না উঠে কয়েক দিন শ্বশুরবাড়ি থেকে বুড়িচং উপজেলা সদরে একটি ভাড়া বাসায় স্ত্রী ও এক সন্তান নিয়ে বসবাস শুরু করেন।
এর পর গত ১৪ জুলাই আদর্শ সদর উপজেলার দুর্গাপুর উত্তর ইউনিয়নের ময়নামতি সেনানিবাসসংলগ্ন নিশ্চিন্তপুর এলাকায় ভাই ভাই ভিলা নামে একটি বাড়ির নিচতলায় ভাড়া নিয়ে চলে যান। এ সময় ওই বাসায় স্ত্রী, শিশুসন্তান মাহমুদ ইসলামছাড়াও শাশুড়ি-শ্যালিকা রিমিকে নিয়ে বসবাস শুরু করেন।
নিহতের বড় বোন হাজেরা আক্তার বলেন, আতাউর নামের এক ব্যক্তির মোবাইল ফোনে ভাইয়ের নিহতের খবর পেয়ে গত ৩০ জুলাই বেলা আড়াইটায় নিশ্চিন্তপুর ভাড়া বাসায় গিয়ে দেখি লাশ মাটিতে শোয়ানো অবস্থায়। এ সময় তারা লাশ দেখতে চাইলেও তাদের লাশ দেখতে দেয়নি মমিনের স্ত্রী মাহমুদা ইসলাম সুমি (২৪)।
লাশ সুরতহাল করে প্রথমে নাজিরাবাজার ফাঁড়ি ও পরে কোতোয়ালি মডেল থানায় নিয়ে যায়।
এ সময় নিহতের মা রাবেয়া বেগমসহ পরিবারের অন্যান্য স্বজনও থানায় উপস্থিত হওয়ার পর পুলিশ নিহতের মাকে অভিযোগপত্র না শুনিয়ে জোরপূর্বক তার কাছ থেকে অপমৃত্যুর স্বাক্ষর করিয়ে নেয়।
নিহতের মা রাবেয়া বেগম অভিযোগ করেন, আমি থানায় স্ত্রী সুমি, শ্বশুর সফিক, শাশুড়ি আনোয়ারা ও পরকীয়া প্রেমিক মনিরের বিরুদ্ধে মামলার জন্য বারবার অনুরোধ করলেও পুলিশ তাকে ধমকায় এবং মামলা নিতে অস্বীকার করেন।
নিহতের মা রাবেয়া ও বোন হাজেরা আক্তার আরও জানান, নিহত মমিন ২০০৭ সালে সৌদিতে যায়। ২০১৪ সালে ফিরে এসে পারিবারিকভাবে সুমির সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়। পরে মমিন আবারও সৌদি আবরে চলে গেলে সুমির সঙ্গে বুড়িচং উপজেলার পীরযাত্রাপুর ইউনিয়নের গোপিনাথপুর গ্রামের মৃত সুলতান আহমদের ছেলে মনিরের অবৈধ সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
বিষয়টি জানার পরই মমিন বিদেশ থেকে চলে এসেছিল। পরে মমিন স্ত্রীকে অবৈধ সম্পর্ক থেকে ফেরানোর চেষ্টা করলে তাদের বিরোধ চরমে ওঠে। এ নিয়ে গত কয়েক দিন তাদের মাঝে ঝগড়াও হয়। এরই জের ধরে ৩০ জুলাই শুক্রবার মমিনকে অজ্ঞাত সহযোগীদের নিয়ে কৌশলে হত্যা করে বলে নিহতের মা রাবেয়া বেগম সন্দেহ করছেন।
পরিবারের সদস্যরা আরও জানান, নিহতের শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। নিহতের মায়ের দাবি সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক তার সন্তানের হত্যার ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির আওতায় এনে বিচার নিশ্চিত করার।
এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী নাজিরাবাজার পুলিশ ফাঁড়ির এসআই ফারুক আহমেদ জানান, তাদের পারিবারিক দ্বন্দ্বের বিরোধের জের এ ঘটনা ঘটতে পারে। আমরা লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছি। ময়নাতদন্তের পর শনিবার লাশ বুড়িচং উপজেলা সদরে তার গ্রামে দাফন করেছে। মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যায়নি।
তবে পুলিশ তদন্ত চলছে, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর রহস্য উন্মোচন হবে। অভিযোগ অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।